কেন্দ্রে বেতন বৃদ্ধি, রাজ্যে হতাশা


কলকাতা ৩০ জুন,

আজ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মোটের উপর মেনে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব স্তরের কর্মীর মূল বেতন ২.৫৭ গুণ বাড়বে। ন্যূনতম মূল বেতন ৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। মূল পেনশন বাড়বে ২.৫৭ গুণ। পুরনো মূল বেতন ও ১২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা মিলে তৈরি হবে নতুন মূল বেতন। ফলে মোট বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ শতাংশের কাছাকাছি। উপকৃত হবেন ১ কোটি কর্মী ও পেনশনভোগী।

গত ৭০ বছরের মধ্যে এই বেতন বৃদ্ধির হার সব চেয়ে কম হলেও সপ্তম বেতন কমিশনের ধাক্কায় কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ফারাক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল। রাজ্যের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এ রাজ্যে এক জন গ্রুপ ডি কর্মী চাকরি শুরুর সময় বেতন পান সাড়ে ১২ হাজার টাকার কিছু বেশি। সেখানে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারি এক জন গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে পাবেন ২২ হাজারের অল্প কিছু বেশি।’’

এই ফারাক আশু মেটার কোনও সম্ভাবনাই দেখছেন না রাজ্য সরকারি কর্মীরা। ১ জুলাই থেকে পে ব্যান্ডের উপরে ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধা চালু হওয়া সত্ত্বেও। এমনিতেই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের মহার্ঘভাতার (ডিএ) ফারাক ছিল ৫০ শতাংশ। সেই ব্যবধান কমানোর ব্যাপারে বাজেটে বা বাজেট বিতর্কের উপরে জবাবি ভাষণে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। নবান্নের কর্তাদের অনেকেরই ধারণা, রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠিত হয়ে গিয়েছে, এই যুক্তি সামনে রেখে আপাতত আর কোনও ডিএ দেবে না সরকার। অথচ কমিশনের কাজে অগ্রগতি নেই। বাজেটে বেতন বৃদ্ধির কারণে খরচের সংস্থানও রাখেনি সরকার। ফলে অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকেরই ধারণা, চলতি আর্থিক বছরে বেতন কমিশনের সুপারিশ আসা ও তা কার্যকর হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

অথচ, কেন্দ্র কিন্তু রেকর্ড দ্রুততায় সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করে ফেলেছে। কমিশন তার সুপারিশ জমা দিয়েছিল গত নভেম্বরে। পঞ্চম বা ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে যথাক্রমে ১৯ ও ৩২ মাস সময় লাগলেও এ বার লেগেছে মাত্র ৭ মাস। এই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অবশ্য বিভিন্ন ভাতার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। কমিশনের ভাতা সংক্রান্ত সুপারিশ ঘিরে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। তাই এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সচিবদের কমিটি তৈরি হবে। আপাতত পুরনো হারেই ভাতা দেওয়া হবে।

নতুন বেতন কমিশন কার্যকর হবে ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, চলতি বছরেই বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে এবং ক’কিস্তিতে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি।

ভাতা ও বকেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়েই বেতন কমিশনে কেন সিলমোহর বসানো হল? সরকারি সূত্রের খবর, এ বার বেতন কমিশন মূল বেতন ও ভাতার ১৪.২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। যা নিয়ে কর্মীদের প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়। কারণ এর আগে কখনও এত কম হারে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়নি। ১১ জুলাই থেকে বহু কর্মী সংগঠন ধর্মঘটে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। সেই সমস্যা ঠেকাতেই তড়িঘড়ি আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় মন্ত্রিসভা। যদিও তাতেও কর্মীদের পুরোপুরি মন পাওয়া যায়নি। এ দিন যে পরিমাণ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা হয়েছে তা মেটাতে সরকারের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকা। জেটলির যুক্তি, বেতন আরও বাড়ালে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছাঁটাই করতে হতো।

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারি কর্মীদের হাতে বাড়তি নগদ টাকা চলে আসায় টাকার জোগান বাড়বে। তার ফলে বাড়ি, গাড়ি, ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে। খানিকটা ভুগতে হবে শিল্পকেও। কারণ, মূল্যবৃদ্ধি হলে সুদের হার কমানো কঠিন হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে।

জেটলি অবশ্য ইতিবাচক দিকটাই দেখতে চান। তাঁর যুক্তি, মানুষের হাতে বেশি টাকা এলে জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়বে। ফলে উৎপাদন বাড়বে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। পাশাপাশি সঞ্চয় বাড়বে, তাতেও অর্থনীতির লাভ। মূল্যবৃদ্ধির বোঝা সত্ত্বেও ভাল বর্ষা ও সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির কাঁধে ভর দিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোর আশা করছেন জেটলি।

এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা অবশ্য অর্থনীতির ভালমন্দ নয়, কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে ফারাক নিয়েই চিন্তিত। এক রাজ্য সরকারি কর্মচারীর তিক্ত মন্তব্য, ‘‘এ বার তো বাজারে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী দেখলে লজ্জায় লুকিয়ে পড়তে হবে।’’ তাঁদের অনেকে আবার বেতন না-বাড়ায় রাজ্যের আইএএস অফিসারদেরই দুষছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আইএএস অফিসারেরা বেতন পান কেন্দ্রের কাঠামোয়। আমাদের বেতন বাড়ল কি না, তা নিয়ে তাঁদের হেলদোল নেই। সরকারকে তাঁরাই বেতন বৃদ্ধি না-করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতই যদি দরদ, ওঁরা তা হলে ঘোষণা করুন, বর্ধিত বেতন নেবেন না।’’

কেন্দ্রে বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই এ রাজ্যের বিরোধী কর্মী সংগঠনগুলি সরব হয়েছে। টুইটে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘কেন্দ্র বেতন কমিশনের সুপারিশ বলবৎ করল।... রাজ্য কিছু করার বদলে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে!’ কংগ্রেস প্রভাবিত কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণ নিয়ম মেনে কেন্দ্রের কর্মীদের বেতন বেড়েছে। আমাদের সরকার তো এই নিয়মই মানে না।’’ সিপিএমের কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহর বক্তব্য, ‘‘এই বঞ্চনা সহ্য করব না।’’ কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বে ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মীদের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাম কর্মী সংগঠনগুলি। কংগ্রেস যোগ দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত হবে বুধবার।

তৃণমূল সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা সৌম্য বিশ্বাস অবশ্য বলেছেন, ‘‘ডিসেম্বরে বেতন কমিশন রিপোর্ট দেবে। আমরা আশাবাদী।’’

About Unknown

“NEonline.in” can give basic notion what about it ! We are a team of experienced professionals those come from other notable professions like blogging, marketing , journalism. Our goal is to reach each and every corner of the whole country and becoming the voice of voice less. Editor : S. A. Ahmed, Executive Editor : Shakil Ahmed, please send us a mail to post here, Email: neonlinenews@gmail.com
    Blogger Comment
    Facebook Comment