ফের ধাক্কা খেলেন মোদী, অরুণাচলে কংগ্রেস সরকার ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট


nabam tuki

১৪ জুলাই, ২০১৬ :
কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব গড়ার লক্ষে উত্তর-পূর্বের চার মুখ্যমন্ত্রী ও ন’টি রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতাদের নিয়ে নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা নেডা গড়ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আজ ছিল তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিরাট ধাক্কা খেল বিজেপি। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন সকালে রায় দেয়, অসাংবিধানিক উপায়ে নাবাম টুকির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসে হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে বর্তমান পিপিএ-বিজেপি জোট সরকার। আদালত ফের নাবাম টুকির সময়কার স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। ফলে আপাতত ক্ষমতাচ্যূত হতে চলেছেন বিজেপির সাহায্যে অরুণাচলে ক্ষমতায় আসা মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল। উত্তরখাণ্ডের পরে অরুণাচলেও ঘুরপথে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে আইনি ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। আদালতের রায়ে কংগ্রেস ও কেজরিওয়ালও বিজেপি বধের নয়া হাতিয়ার পেয়ে উত্ফুল্ল।
অসমে দেড় দশকের কংগ্রেস শাসন শেষ করে ক্ষমতা দখলের পরে গোটা উত্তর-পূর্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বিজেপি। অসম বাদে, উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের মধ্যে নাগাল্যান্ড ও সিকিমে তাদের মিত্র সরকার রয়েছে। অরুণাচলে বিজেপির সাহায্যে ক্ষমতায় আসা পিপিএ সরকারকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন অমিত শাহ। লক্ষ্য ছিল নেডা গড়ে ২০১৭ সালে মণিপুর ও ২০১৮ সালে মেঘালয়েও সরকার দখল করা। সেই লক্ষ্যে আজ গুয়াহাটিতে নেডার উদ্বোধনী সমাবেশে অসম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী, ন’টি দলের মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতা, প্রায় ২৫ জন সাংসদ ও ২০০ সদস্য নিয়ে চাঁদের হাট বসিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর মুখেই দিল্লি থেকে দুঃসংবাদ আছড়ে পড়ে পুল ও শাহের কাছে। 
সুপ্রিম কোর্ট অপসৃত স্পিকার নাবাম রিবিয়া ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির দায়ের কথা মামলায় রায় দেয়, রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়া যে ভাবে বিধানসভা অধিবেশন নির্দষ্ট সময় থেকে এক মাস আগে এগিয়ে আনেন- তা অসাংবিধানিক। তাই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বসা বিধানসভার অবৈধ অধিবেশনের আগে রাজ্যে যে সাংবিধানিক পরিস্থিতি ছিল- সেটাই বজায় রাখা হোক। আদালতের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আরও নির্দেশ দেয়, রাজ্যপালের নির্দেশে বসা বিধানসভা অধিবেশনে স্পিকারকে অপসারণ করা, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা-সহ যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেগুলিও খারিজ করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও বিধানসভা তলব করা নিয়ে সাংবিধানিক ক্ষমতা সংক্রান্ত যে রায় অরুণাচল প্রসঙ্গে দেওয়া হয়েছে- তা গোটা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ও পরে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নতুন সরকার গঠনের বিরুদ্ধে রুজু করা আরও দু’টি মামলাকে পৃথক করে রেখেছে আদালত। অবশ্য আদালতের রায়ে আগের স্থিতাবস্থা ফিরলেও, আস্থা ভোটে জিতে সরকার ধরে রাখতে পারাই টুকির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। পুল জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক তাঁর পক্ষে থাকায় সরকার পিপিএর থাকবে। অবশ্য টুকির দাবি, তিনি ৪৭ জন বিধায়কের সমর্থন পেতে চলেছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই অরুণাচলে শুরু হয়ে গিয়েছে বিধায়ক কেনাবেচার খেলা।
গত বছর ডিসেম্বরে, রাজ্যের ৪৭ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ২১ জন নাবাম টুকির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কালিখো পুল। বিজেপির ১১ জন বিধায়ক ও দুই নির্দল বিধায়কও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। তাঁরা রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়াকে জানান, টুকি সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। বিধানসভার অধিবেশন ডেকে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হোক। বিধানসভা অধিবেশন বসার কথা ছিল জানুয়ারিতে। কিন্তু রাজ্যপাল স্পিকার বা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ১৫ ডিসেম্বর বিধানসভা অধিবেশন ডাকেন। অন্য দিকে দলবিরোধী কাজের জন্য তদানীন্তন স্পিকার নাবাম রিবিয়া পুল-সহ ১৪ জনকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেন। টুকি সরকার বিধানসভা ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
বিধানসভায় ঢুকতে না পরে ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পুল-সহ ৩৪ জন বিধায়ক ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশে একটি কমিউনিটি হল ও হোটেলের কনফারেন্স রুমে অস্থায়ী বিধানসভা অধিবেশন বসিয়ে রিবিয়াকে অপসারণ করেন ও টুকির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়ে পুলকে নেতা নির্বাচিত করেন। 
রাজ্যপালের নির্দেশে হওয়া বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে পুলপন্থীরা টুকিকে সরিয়ে পুলকে নতুন নেতা নির্বাচন করলেও প্রাক্তন স্পিকার গোটা বিষয়টি আপাতত সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারাধীন। এ দিন টুকির পক্ষের আইনজীবিরা সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে নতুন সরকার গড়ার ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশের আবেদন করে শেষ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
রাজ্যপালের তুঘলকি কাণ্ডের বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন টুকি-রিবিয়া। রাজ্যপালও টুকিদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া ও হেনস্থা করার অভিযোগ দায়ের করেন। টুকিও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করে চিঠি পাঠান। হাইকোর্ট রাজ্যপালের নির্দেশ ও অস্থায়ী বিধানসভায় নেওয়া সব সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয়। মামলা গড়া সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেও জারি হয় স্থগিতাদেশ। রাজ্যের সাংবিধানিক সংকটের প্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। কিন্তু ১৬ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পরেই পুল ৩১ জন বিধায়কের সমর্থন-সহ সরকার গড়ার আবেদন জানান। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে নাটকীয়ভাবে শপথ নেয় নতুন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জনতার দরবার বসানো, দুর্নীতি বন্ধ করা, জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করা শুরু করেছিলেন আনজাও জেলার চিন ঘেঁষা হায়ুলিয়াংয়ের পাঁচবারের বিধায়ক পুল। কিন্তু ছোট্ট কামান মিশমি সম্প্রদায় থেকে হওয়া প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর শাসন চলল মাত্র পাঁচ মাস। 
আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে খুশি নাবাম টুকি বলেন, “গণতন্ত্র ও সংবিধানকে হত্যা করে বাঁকা পথে ক্ষমতা দখল করতে শুরু করেছিল বিজেপি। জনতার ভোটে নির্বাচিত সরকারকে রাজ্যপালের সাহায্যে ফেলে দিয়েছিল তারা। আশা ছিল সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার পাব। সেটাই হল। এবার নিশ্চয়ই অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক রাস্তা ছাড়বে বিজেপি।” প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্যপাল রাজখোয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে। রাজখোয়া এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল এ দিন বলেন, “সংবিধানের তোয়াক্কা না করে উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচলে নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করার চেষ্টা করেছিল বিজেপ। আশা করি আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাদের বোধোদয় হবে।” 
কংগ্রেস অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করে। রাহুল গাঁধী টুইট করে লেখেন, ‘গণতন্ত্র কী তা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ।’
অবশ্য ভাঙলেও মচকাচ্ছেন না পুল। গুয়াহাটিতে তিনি বলেন, “আমি এখনও রায় দেখিনি। আদালতের রায়ে সরকার চলে না। সরকার চলে সংখ্যার ভিত্তিতে। নাবাম টুকিকে আগে আস্থা ভোটে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। তা তিনি পারবেন না কারণ আমাদের পক্ষেই বিধায়কের সংখ্যা বেশি।” 
অরুণাচলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও বলেন, “গণতন্ত্র মেনেই রাজ্যে পুল সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানেই কংগ্রেসের সরকার গড়া নয়। নিয়ম মেনে বেশি বিধায়ক যাদের তারাই সরকার চালাবে।”


About Unknown

“NEonline.in” can give basic notion what about it ! We are a team of experienced professionals those come from other notable professions like blogging, marketing , journalism. Our goal is to reach each and every corner of the whole country and becoming the voice of voice less. Editor : S. A. Ahmed, Executive Editor : Shakil Ahmed, please send us a mail to post here, Email: neonlinenews@gmail.com
    Blogger Comment
    Facebook Comment